কোনো কিছু করার সামর্থ্যই হলো শক্তি। আমরা সকল কাজেই শক্তি ব্যবহার করি।
(১) আমাদের চারপাশের শক্তিসমূহ
পায়ে হেঁটে স্কুলে যেতে এবং সাইকেল চালাতে আমরা শক্তি ব্যবহার করি। খাবার রান্না করতে কিংবা কম্পিউটার চালাতে আমাদের শক্তির প্রয়োজন হয়। শক্তি ব্যবহার করেই গাড়ি চলে । শক্তি কোনো কিছুর রূপ বা অবস্থানের পরিবর্তন করতে পারে।
শক্তির বিভিন্ন রূপ রয়েছে। যেমন—
শক্তির বিভিন্ন রূপ | ||
---|---|---|
শক্তির বিভিন্ন রূপ | বিবরণ | উদাহরণ |
বিদ্যুৎ শক্তি | বৈদ্যুতিক বাতি এবং পাখা, টেলিভিশন, ওয়াশিং মেশিন ইত্যাদি চালাতে এই শক্তি ব্যবহৃত হয়। | |
যান্ত্রিক শক্তি | কোনো চলমান বস্তুর শক্তি হলো এক ধরনের যান্ত্রিক শক্তি। যেমন— বায়ুপ্রবাহ একটি যান্ত্রিক শক্তি। কারণ এটি বায়ুকল চালাতে পারে। এছাড়া, চলমান গাড়ির শক্তিও যান্ত্রিক শক্তি। | |
আলোক শক্তি | বিভিন্ন ধরনের আলো সৃষ্টি করতে সক্ষম যে শক্তি আমাদের দেখতে সাহায্য করে তাই আলোক শক্তি। এটি স্বচ্ছ বস্তুর ভেতর দিয়ে যেতে পারে। সূর্য, বৈদ্যুতিক বাতি, মোমবাতি ইত্যাদি থেকে আমরা আলোক শক্তি পাই। | |
শব্দ শক্তি | শব্দ শক্তি হলো এমন একটি শক্তি যা আমাদের শুনতে সাহায্য করে। বস্তুর কম্পন থেকে শব্দের সৃষ্টি হয়। এটি বায়ু বা অন্য কিছুর ভেতর দিয়ে চলতে পারে। গান শুনতে আমরা এই শক্তি ব্যবহার করি। | |
তাপ শক্তি | তাপ এক প্রকার শক্তি। চুলার আগুন, বৈদ্যুতিক ইস্ত্রি ইত্যাদি থেকে আমরা তাপ শক্তি পাই। | |
রাসায়নিক শক্তি | | খাবার, জ্বালানি তেল, কয়লা ইত্যাদিতে রাসায়নিক শক্তি সঞ্চিত থাকে। |
তোমরা দেখেছ নানা কাজে, নানাভাবে শক্তি ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন উৎস থেকে আমরা শক্তি পাই । এই শক্তি কখনো আসছে কয়লা, তেল বা খাবার থেকে। কখনো আসছে বায়ুপ্রবাহ বা পানির স্রোত থেকে। আবার কখনো ব্যাটারি বা জেনারেটর থেকে। এই সব উৎস থেকেই আমরা তাপ, আলো, বিদ্যুৎ, শব্দ ইত্যাদি শক্তি পাই। খুব ভালো করে খেয়াল করলে দেখবে এ সমস্ত শক্তির মূল উৎসই সূর্য।
চলো আমরা আমাদের চারপাশের শক্তিসমূহ খুঁজে বের করি ।
১. নিচে দেখানো ছকের মতো খাতায় একটি ছক তৈরি করি।
যেভাবে শক্তি ব্যবহৃত হয় | শক্তির রূপ | শক্তির উৎস |
---|---|---|
২. নিচের ছবিতে শক্তি কী কী উপায়ে ব্যবহৃত হচ্ছে তা খুঁজে বের করে শক্তির ব্যবহার, এর রূপ এবং উৎসগুলো ছকে লিখি ।
৩. সহপাঠীদের সাথে আলোচনা করে কাজটি সম্পন্ন করি।
প্রশ্ন : শক্তি কীভাবে রূপান্তরিত হয় ?
কাজ : শক্তির রূপান্তর
কী করতে হবে :
১. নিচের রেখাচিত্রের মতো একটি রেখাচিত্র আঁকি।
২. নিচের ছবি দেখে সূর্য থেকে পাওয়া শক্তির বিভিন্ন রূপ উপরের রেখাচিত্রে বসাই।
৩. কাজটি নিয়ে সহপাঠীদের সাথে আলোচনা করি।
শক্তি এক রূপ থেকে অন্য রূপে পরিবর্তিত হতে পারে। শক্তির রূপের এই পরিবর্তনই হলো শক্তির রূপান্তর। সূর্য থেকে পাওয়া শক্তি সৌরশক্তি নামে পরিচিত। সৌরশক্তিকে আমরা প্রত্যক্ষভাবে আলো ও তাপ হিসেবে পাই। এটি আবার বিভিন্ন শক্তিতে রূপান্তরিত হতে পারে। যখন উদ্ভিদ খাদ্য তৈরি করে তখন সৌরশক্তি রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। প্রাণী যখন খাদ্য হিসেবে এই উদ্ভিদ গ্রহণ করে তখন এই রাসায়নিক শক্তি তাপ এবং যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। সৌর প্যানেল সৌরশক্তিকে বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তরিত করে। যখন আমরা টেলিভিশন চালাই তখন এই বিদ্যুৎ শক্তি আলোক, তাপ এবং শব্দ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
আমাদের চারপাশে শক্তির রূপান্তর
১. আমাদের চারপাশে শক্তির রূপান্তরসমূহ খুঁজে বের করে তালিকা তৈরি করি।
২. সহপাঠীদের সাথে আলোচনা করে কাজটি সম্পন্ন করি।
প্রশ্ন : শক্তি কীভাবে সঞ্চালিত হয় ?
কাজ : তাপ সঞ্চালন
কী করতে হবে :
১. জমাট বাঁধা ঘি/ডালডা, পাতলা ধাতব চামচ, ছোট পুঁতি, কাচের বাটি বা চায়ের মগ, স্টপওয়াচ বা হাতঘড়ি এবং গরম পানি নিই।
২. নিচে দেখানো ছকের মতো খাতায় একটি ছক তৈরি করি।
কোনটি কখন পড়বে (প্রথমে, মাঝে ও শেষে ) | কখন পড়েছে | |
---|---|---|
পুঁতি ‘ক’ | ||
পুঁতি ‘খ’ | ||
পুঁতি ‘গ’ |
৩. সমপরিমাণ ঘি বা ডালডা ব্যবহার করে পুঁতি তিনটি চামচের হাতলে আটকাই।
8. কাচের বাটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে গরম পানি ঢালি এবং তাতে আস্তে আস্তে চামচটির অগ্রভাগ ডুবাই।
৫. কোন পুঁতিটি আগে পড়বে তা অনুমান করে উপরের ছকে লিখি ।
৬. ক, খ এবং গ পুঁতি চামচ থেকে কখন পড়েছে তার সময় পরিমাপ করে ছকে লিখি ।
৭. কাজটি নিয়ে সহপাঠীদের সাথে আলোচনা করি।
উপরের পরীক্ষাটির ফলাফলের উপর ভিত্তি করে নিচের বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করি ৷
* কোন পুঁতিটি প্রথমে পড়েছে? কেন ?
* ধাতব চামচের মতো কঠিন পদার্থের মধ্য দিয়ে তাপ কীভাবে সঞ্চালিত হলো ?
শক্তি বিভিন্ন উপায়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সঞ্চালিত হয়।
(১) তাপ সঞ্চালন
উচ্চ তাপমাত্রার স্থান থেকে নিম্ন তাপমাত্রার স্থানে তাপের প্রবাহই হলো তাপ সঞ্চালন। তাপ পরিবহন, পরিচলন এবং বিকিরণ এই তিন উপায়ে সঞ্চালিত হয়।
কঠিন পদার্থের মধ্য দিয়ে তাপ পরিবহন পদ্ধতিতে সঞ্চালিত হয়। আমরা যদি গরম পানির পাত্রে একটি ধাতব চামচের অগ্রভাগ ডুবাই তবে খুব দ্রুতই চামচটির হাতল গরম হয়ে উঠে। এর কারণ, গরম পানির তাপ চামচের মধ্য দিয়ে সঞ্চালিত হয়ে চামচের গরম অংশ থেকে ঠান্ডা অংশে ছড়িয়ে পড়ে।
তরল এবং বায়বীয় পদার্থের মধ্য দিয়ে তাপ পরিচলন পদ্ধতিতে সঞ্চালিত হয়। যখন আমরা কোনো পানির পাত্রকে চুলায় গরম করি তখন এর নিচের অংশের পানি প্রথমে গরম হয়ে উপরে উঠে আসে। আর পাত্রের উপরের অংশের পানির তাপমাত্রা কম থাকায় তা নিচে নেমে আসে যা আবার গরম হয়ে উপরের দিকে উঠে আসে। এভাবে তাপ পাত্রের পানির সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে।
যে প্রক্রিয়ায় তাপ শক্তি কোনো মাধ্যম ছাড়াই উৎস থেকে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে তাই বিকিরণ। কঠিন পদার্থের মধ্য দিয়ে পরিবহন এবং তরল ও বায়বীয় পদার্থের মধ্য দিয়ে পরিচলন প্রক্রিয়ায় তাপ সঞ্চালিত হয়। কিন্তু বিকিরণ প্রক্রিয়ায় তাপ কঠিন, তরল এবং বায়বীয় মাধ্যম ছাড়া সঞ্চালিত হয়। এ কারণে পৃথিবী থেকে সূর্য লক্ষ লক্ষ কিলোমিটার দূরে হলেও আমরা সূর্যের তাপ পাই। আগুন কিংবা বৈদ্যুতিক বাতি থেকেও এ প্রক্রিয়ায় তাপ পাওয়া যায়।
(২) আলোর সঞ্চালন
আলো শক্তির এমন একটি রূপ যা আমাদের দেখতে সাহায্য করে। আলো বিকিরণ পদ্ধতিতে সঞ্চালিত হয়। কঠিন, তরল এবং বায়বীয় মাধ্যম ছাড়াই আলো সঞ্চালিত হতে পারে। আলোর সঞ্চালনের জন্য কোনো মাধ্যমের প্রয়োজন হয় না। চাঁদ, তারা এবং সূর্য থেকে আলো বিকিরণ প্রক্রিয়াতেই পৃথিবীতে আসে।
চলো কোথায় এবং কীভাবে তাপ সঞ্চালিত হয় তা খুঁজে বের করি।
১. নিচের ছবিতে কোথায় এবং কীভাবে তাপ সঞ্চালিত হচ্ছে তা খুঁজে বের করি।
২. সহপাঠীদের সাথে আলোচনা করে কাজটি সম্পন্ন করি।
শক্তির সংরক্ষণ কেন জরুরি ?
আমরা প্রতিদিন নানা কাজে শক্তি ব্যবহার করি। তেল, কয়লা এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের মতো অনবায়নযোগ্য শক্তির উৎসের উপরই আমরা বেশি নির্ভরশীল। এসকল শক্তির উৎস ব্যবহারের ফলে নিঃশেষ হলে তা আর সহজে তৈরি হয় না। তাই আমাদের শক্তির যথাযথ ব্যবহার করতে হবে। শক্তির অপচয় পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর । শক্তির যথাযথ ব্যবহার করে আমরা শক্তির অপচয় রোধ করতে পারি এবং পরিবেশ দূষণ কমাতে পারি।
কীভাবে শক্তি সংরক্ষণ করব
শক্তি সংরক্ষণের কিছু উপায় নিচে দেওয়া হলো-
• ব্যবহারের পর বৈদ্যুতিক বাতি এবং যন্ত্রপাতিসমূহ বন্ধ রাখা ।
• প্রয়োজনের অতিরিক্ত সময় ধরে ফ্রিজের দরজা খোলা না রাখা।
• বাড়িতে ছায়ার ব্যবস্থা করার জন্য গাছ লাগানো ।
• বাতি না জ্বালিয়ে পর্দা সরিয়ে দিনের আলো ব্যবহার করা।
• গাড়ির বদলে যথাসম্ভব পায়ে হাঁটা বা সাইকেল ব্যবহার করা।
আমরা কীভাবে শক্তি সংরক্ষণ করতে পারি ?
শক্তি সংরক্ষণের উপায় |
১. ডান পাশের ছকের মতো খাতায় একটি ছক তৈরি করি।
২. শক্তি সংরক্ষণের জন্য কী করব তার তালিকা ছকে লিখি।
৩. সহপাঠীদের সাথে আলোচনা করে কাজটি সম্পন্ন করি।
৪. শক্তি সংরক্ষণের জন্য শ্রেণিকক্ষে কিছু নিয়ম তৈরি করি।
যার ওজন আছে এবং জায়গা দখল করে তাই পদার্থ। আমাদের চারপাশের সবকিছুই পদার্থ। এমনকি বায়ু যা আমরা দেখতে পাই না তাও পদার্থ।
প্রশ্ন : পদার্থ কী দিয়ে তৈরি ?
কাজ : এক খণ্ড চক গুঁড়া করি ।
কী করতে হবে :
১. কয়েক খণ্ড চক, খবরের কাগজ এবং একটি হাতুড়ি নিই ৷
২. নিচের ছকের মতো খাতায় একটি ছক তৈরি করি।
এক খণ্ড চক | ভাঙা চক | চকের গুঁড়া |
---|---|---|
৩. এক খণ্ড চক পর্যবেক্ষণ করি এবং ছকে তার ছবি আঁকি।
8. খবরের কাগজের উপরে চক খণ্ডটি রেখে হাতুড়ি দিয়ে ভেঙে ছোট ছোট টুকরা করি।
৫. ভাঙা চক পর্যবেক্ষণ করি এবং ছকে তার ছবি আঁকি।
৬. হাতুড়ি দিয়ে চকের ছোট টুকরাগুলো আরও ভেঙে মিহি গুঁড়া করি।
৭. চকের মিহি গুঁড়া পর্যবেক্ষণ করে ছকে তার ছবি আঁকি।
পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে নিচের বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করি।
* তুমি কি মনে কর চকের মিহি গুঁড়া এবং চক খণ্ড একই ?
* তুমি কি মনে কর চকের মিহি গুঁড়াকে আরও ছোট করা সম্ভব ?
খালি চোখে দেখা যায় না এমন সূক্ষ্ম কণা দিয়ে পদার্থ গঠিত। পদার্থের এই সূক্ষ্ম কণাই হলো পরমাণু। দুই বা ততোধিক পরমাণু একত্রিত হয়ে অণু গঠন করে। পদার্থ হলো অসংখ্য অণুর সমষ্টি।
পদার্থ কঠিন, তরল না বায়বীয় অবস্থায় থাকবে তা নির্ভর করে পদার্থের অণুগুলো কীভাবে সাজানো, এদের মধ্যে বন্ধন কেমন, তার উপর। পানি একটি পদার্থ। পানির তিনটি অবস্থা রয়েছে। যেমন— বরফ, পানি এবং জলীয় বাষ্প। পানি অসংখ্য পানির অণু দ্বারা গঠিত। এই অণুসমূহ সবসময়ই গতিশীল। কঠিন পদার্থ যেমন— বরফে পানির অণুসমূহ খুব কাছাকাছি থাকে এবং তাদের বন্ধন অনেক বেশি দৃঢ়। তরল পদার্থ যেমন— পানিতে পানির অণুসমূহ যথেষ্ট কাছাকাছি থাকলেও তাদের চলাচল করার জন্য অণুগুলোর মাঝে অল্প কিছু খালি জায়গা থাকে। আবার বায়বীয় পদার্থ যেমন— জলীয় বাষ্পে পানির অণুসমূহ একে অপর থেকে বেশ দূরে অবস্থান করে। বায়বীয় পদার্থের অণুগুলোর মাঝে অনেক বেশি খালি জায়গা থাকে। ফলে অণুগুলো দ্রুতগতিতে সর্বক্ষণ স্বাধীনভাবে চলাচল করতে পারে।
১) শক্তির ৫টি রূপের নাম লেখ ৷
২) তাপ সঞ্চালনের তিনটি প্রক্রিয়া কী কী ?
৩) কীভাবে আলো সঞ্চালিত হয় ?
৪) পরমাণু কী ?
৫) গিটার বাজানো হলে কোন ধরনের শক্তি উৎপন্ন হয়?
১) যখন টিভি চালানো হয় তখন শক্তির কী কী রূপান্তর ঘটে?
২) ঠান্ডা পানির গ্লাস হাত দিয়ে ধরে রাখলে হাত ঠান্ডা হয়ে যায়। তোমার বন্ধু মনে করে গ্লাসের ঠান্ডা হাতে চলে যাওয়ার কারণে হাত ঠান্ডা হয়ে যায়। তার ধারণাটি কী সঠিক? ব্যাখ্যা কর ।
৩) যখন পাতিলে ভাত রান্না করা হয় তখন তাপ কীভাবে সঞ্চালিত হয় ?
৪) বাড়ির আশপাশে বৃক্ষ রোপণ করে কীভাবে শক্তি সংরক্ষণ করা যায় ?